‘ফাঁসি চাই’, ‘ফাঁসি চাই’।
একদল আরেকদলের বিরুদ্ধে স্লোগান দিচ্ছে।
কিন্তু আমাদের আলিমরা কেমন ছিলেন?
——————————–
কিছু আলিমদের ষড়যন্ত্রের ফলে ইবনু তাইমিয়্যাহ (রহঃ)-কে জেলে যেতে হয়। আর আল্লাহর ইচ্ছায় তিনি জেলে থাকা অবস্থাতেই দাবার ছক উল্টে গেল।
নতুন যে শাসক এলেন তিনি পুরোনো শাসক এবং সেইসব আলিমদেরকে ঘৃণা করতেন। তিনি ইবনু তাইমিয়্যাহ (রহঃ)-কে কারাগার থেকে মুক্ত করে তাঁকে সম্মানিত করেন। আর তাঁকে বন্দী করার পেছনে যে সমস্ত আলিমদের হাত ছিল, তাদেরকে জেলবন্দী করেন।
তিনি ইবনু তাইমিয়্যাহ (রহঃ)-কে তাঁদের বিরুদ্ধে কিছু বলার অনুরোধ করলেন। তিনি ইতিমধ্যেই তাদেরকে ঘৃণা করতেন, তবু প্রমাণস্বরূপ ইবনু তাইমিয়্যাহ (রহঃ)-এর কাছ থেকে কিছু শুনতে চাইলেন যাতে তিনি তাদের হত্যা করতে পারেন।
.
ইবনু তাইমিয়্যাহ (রহঃ)-এর মুখ থেকে শুধু একটিমাত্র কথা শোনার অপেক্ষা, আর এরপরই তাদের হত্যা করা হবে—এটাই তাঁর ইচ্ছা ছিল। কেননা সেই শাসক তাদেরকে ও তাদের প্রাক্তন নেতাকে ঘৃণা করত।
কিন্তু ইবনু তাইমিয়্যাহ (রহঃ) বললেন, “এরা হচ্ছেন উলামা এবং এদেরকে বন্দী করা হলে উম্মাহর উপর ভয়াবহ বিপর্যয় নেমে আসবে।”
.
আহমাদ ফরিদ (রহঃ), ইবনু তাইমিয়্যাহকে নিয়ে লেখা তাঁর একটি গ্রন্থে বলেন, “ইবনু মাখলুফ ছিলেন তাঁর সময়কার বিখ্যাত মালিকি ইমামদের একজন। যখন তাঁকে মুক্তি দেওয়া হল, তিনি বললেন, আমি আমার জীবনে ইবনু তাইমিয়্যাহর মতো এত মহানুভব আর কাউকে দেখিনি।
আমরা ইবনু তাইমিয়্যাহর বিরুদ্ধে শাসকদের ক্ষেপিয়ে তুলে তাঁকে জেলে পাঠানোর ব্যবস্থা করেছি। অথচ মুক্তি পাওয়ার পর যখন তাঁর অবস্থান আমাদের চেয়ে উত্তম হলো, যখন মাত্র একটা কথার দ্বারা তিনি আমাদের হত্যা করতে পারতেন—তখন তিনি তা না করে আমাদের জান বাঁচিয়ে দিলেন। আমাদের পক্ষ নিয়ে কথা বললেন—আমাদের প্রশংসা করলেন!”
.
ইবনুল কাইয়্যিম (রহঃ) তাঁর উস্তাদ ইবনু তাইমিয়্যাহ (রহঃ)-এর ব্যাপারে বলেন, “আমি ইবনু তাইমিয়্যাহর মতো আর কাউকে দেখিনি। তিনি কখনও তার শত্রুদের অভিশাপ দেননি।” ইবনুল কাইয়্যিম আরও বলেন, “আমি একবার তাঁর কাছে একটা সুসংবাদ জানাতে গিয়েছিলাম। তিনি আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, কী সুখবর এনেছো, হে ইবনুল কাইয়্যিম? আমি তাকে বললাম যে, তাঁর খুব বড় একজন শত্রু মারা গেছে।”
.
ইবনুল কাইয়্যিম তাঁর শাইখকে এই খবরটা দিতে গিয়ে খুব উত্তেজিত হয়ে পড়েছিলেন। কিন্তু ইবনু তাইমিয়্যাহ এই খবরটা শোনার সাথে সাথে বললেন, “ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রজিউন, মুসলিমের মৃত্যু কখনও সুসংবাদ হতে পারে না।”
.
ইবনুল কাইয়্যিম বলেন, “এরপর ইবনু তাইমিয়্যাহ তৎক্ষনাৎ উঠে দাঁড়ালেন এবং তার পরিবারকে সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য তাদের বাড়িতে গেলেন। তিনি মৃত ব্যক্তির সন্তানদের নিকট গিয়ে বললেন, আমি তোমাদের বাবার মতো। তোমরা তোমাদের বাবাকে হারিয়েছো ঠিকই কিন্তু আজ থেকে আমাকে তোমরা তোমাদের বাবার মতো জানবে। তোমাদের যদি কখনো কিছু প্রয়োজন হয়, তবে আমাকে জানিও।”
.
দেখুন, ক্ষমার কী চমৎকার দৃষ্টান্ত! অথচ ঐ ব্যক্তি ছিল ইবনু তাইমিয়্যাহর সবচেয়ে বড় শত্রু। ইবনুল কাইয়্যিম বলেন, “ইবনু তাইমিয়্যাহর প্রতি তাঁদের সীমাহীন ভালবাসা আর সম্মানের কারণ ছিলো—তিনি একজন পরিষ্কার মনের মানুষ ছিলেন।”
.
ইবনু তাইমিয়্যাহর একজন ছাত্র একবার আফসোস করে বলেছিলেন, “ইশ, ইবনু তাইমিয়্যাহ তাঁর শত্রুদের সাথে যে আচরণ করেছেন, আমি যদি আমার বন্ধুদের সাথে তা করতে পারতাম! আমার যদি ক্ষমা করার এমন গুণ থাকত!”
.
.
উৎস:
ধূলিমলিন উপহার: রামাদান
পর্ব: বিদায় রামাদান
ছবি: সংগৃহীত।