kokhon attohotta korben

কখন আত্নহত্যা করবেন?

একটু পর ছেলেটি বলল, ‘তো আন্টি, যদি কেউ প্যারালাইজড হয়ে যায়....

একটু পর ছেলেটি বলল, ‘তো আন্টি, যদি কেউ প্যারালাইজড হয়ে যায়, বা তার কোনো অনিরাময়যোগ্য ব্যাধি হয়, যেমন ক্যান্সার, তাহলে কি সে আত্নহত্যা করতে পারে?’

তখন ওদের একটা গল্প শোনালাম যা মাসজিদে খুতবায় শুনেছিলাম।
একবার এক লোক মরুভূমির মধ্য দিয়ে অতিক্রম করার সময় মরুঝড়ে পথ হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়ল। হঠাৎ বাতাস আর বালির আস্তরণ ভেদ করে কিছুদূরে তাঁবুর মতো কিছু একটা তার চোখে পড়ল। কোনোক্রমে হামাগুড়ি দিয়ে সে তাঁবু পর্যন্ত পৌঁছে ভেতরে ঢুকে পড়ল। তাঁবুতে প্রবেশ করে সে বুঝতে পারল শতছিন্ন তাঁবুর ভেতর ধূলিঝড় আর প্রচন্ড বাতাস অনায়াসে আনাগোনা করছে। তাঁবুর সর্বত্র চরম দারিদ্রের চিহ্ন দৃশ্যমান। এর মধ্যেই মাটিতে মাদুর পেতে শুয়ে আছে এক বৃদ্ধ। দেখাই যাচ্ছে বৃদ্ধের সম্পূর্ণ শরীর প্যারালাইজড, তার চোখ দুটো অন্ধ হয়ে গিয়েছে। বৃদ্ধ একটানা বলে চলেছে, ‘সকল প্রশংসা আল্লাহর যে তিনি তাঁর রাহমাতের জন্য আমাকে নির্বাচন করেছেন’।
বৃদ্ধের এ কথা শুনে লোকটি এত আশ্চর্য হলো যে সে বলল, ‘আমি এসেছিলাম আপনার কাছে দিক-নির্দেশনা চাইতে। কিন্তু আগে আমি জানতে চাই কোনদিক থেকে আপনি মনে করেন আল্লাহ্ আপনাকে তাঁর অন্যান্য বান্দার ওপর প্রাধান্য দিয়েছেন? অথচ আমি দেখতে পাচ্ছি আপনার অবস্থা সবদিকে থেকেই শোচনীয়!’
বৃদ্ধ বললেন, ‘আল্লাহ্ কি আমাকে একটি সুস্থ মস্তিষ্ক দেননি, ফলে আমি তার প্রশংসা করতে পারছি? তুমি কি দেখনি কত নারীপুরুষ রয়েছে যাদের আল্লাহ এই নিয়ামতটি দেননি?’

লোকটি বলল, ‘জ্বী, আপনি ঠিক বলেছেন’।
বৃদ্ধ বললেন, ‘আল্লাহ কি আমাকে তার পছন্দনীয় দ্বীন বোঝার ক্ষমতা দেননি? অথচ তাঁর কত বান্দা তাঁকে চেনেই না!’

লেকটি বলল, ‘আপনি নিঃসন্দেহে সত্য বলেছেন!’
বৃদ্ধ এবার বললেন, ‘আমি তোমাকে দিকনির্দেশনা দিয়ে দেবো, কিন্তু তোমাকে আগে আমার একটি কাজ করে দিতে হবে। আমি আমার সব সম্পদ এবং স্ত্রী হারিয়ে ফেলেছি, আমার কনিষ্ঠ পুত্রটি ছাড়া-যে আমার দেখাশোনা করে। তুমি তো দেখতেই পাচ্ছ আমার পক্ষে নিজের কোনো কাজই করা সম্ভব নয়। আমার ছেলেটি কাল বেরিয়েছে, কিন্তু এখনো ফিরে আসেনি। তুমি কি যাবার আগে তাকে খুঁজে দিয়ে যেতে পারো?’

লোকটি তাঁবু থেকে বের হয়ে দেখতে পেল অদুরেই শকুনের দল চক্কর দিচ্ছে। তার হৃৎপিন্ড ধক করে উঠল। যখন সে সেই স্থানে পৌঁছল, তখন দেখতে পেল বালকটির মৃতদেহ অর্ধভুক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। নেকড়ের দল যা ফেলে গিয়েছে তা সাবাড় করার জন্য শকুনের আগমন।

লোকটি ভাবল, ‘পালিয়ে যাই’, কারণ বৃদ্ধকে তার জীবনের শেষ অবলম্বনটিও হারানোর খবর দেয়ার মতো সাহস তার ছিল না। কিন্তু সে পারল না। সে বৃদ্ধের কাছে ফিরে গেল। বৃদ্ধকে খবরটি জানানোর পরিবর্তে সে তাকে জিজ্ঞেস করল, ‘আপনি কি মনে করেন আল্লাহ আপনাকে বেশি ভালোবাসেন নাকি আইয়ুব (আঃ) কে?’

বৃদ্ধ বললেন, ‘অবশ্যই আইয়ুব (আঃ) কে’।

সে বলল, আপনি কি মনে করেন আল্লাহর পথে আইয়ুব (আঃ) বেশি ত্যাগ স্বীকার করেছেন নাকি আপনি?’

বৃদ্ধ বললেন, ‘অবশ্যই আইয়ুব (আঃ)। তিনি আল্লাহর পথে সব কিছু ত্যাগ করেছিলেন, আমার তো একটি পুত্র অবশিষ্ট রয়েছে’।

এবার আর কোনো উপায় রইল না, লোকটিকে জানাতে হলো যে বৃদ্ধের এখন আর কেউ অবশিষ্ট নেই। কিন্তু সংবাদটি শুনেই বৃদ্ধ বললেন, ‘সকল প্রশংসা আল্লাহর যে তিনি আমাকে আইয়ুব (আঃ) এর ভাগ্য দান করছেন!’

অল্প কিছুক্ষনের মধ্যেই তার হৃৎস্পন্দন বাড়তে লাগল, তার শ্বাসপ্রশ্বাস কমতে লাগল এবং অবশেষে তিনি মারা গেলেন। লোকটি চিন্তায় পড়ে গেল কীভাবে তাকে কবর দেবে। কিন্তু কিছুক্ষনের ভেতর সেখানে একটি বাণিজ্য কাফেলা এসে পৌঁছল, তারাও মরুঝড়ের কারণে পথ থেকে সরে এসে এখানে উপস্থিত হয়েছে। সবাই মিলে বৃদ্ধকে গোসল দিয়ে, কাফন পরিয়ে কবর তৈরি করে, দাফন দিয়ে দিল। জানাজার পর লোকটি ঐ কাফেলার সাথেই স্থান ত্যাগ করল।
সে রাতে বৃদ্ধ তার স্বপ্নে দেখা দিল। কিন্তু এ কী? সে তো এক তাগড়া নওজোয়ানে রূপান্তরিত হয়েছে! তাকে সম্পূর্ণ সুস্থ এবং অত্যন্ত আনন্দিত দেখাচ্ছিল। সাথে ছিল তার সম্পূর্ণ পরিবার। সে বলল, ‘আমি তোমাকে জানাতে এসেছি যে আল্লাহ আমাকে জান্নাত উপহার দিয়েছেন, কেননা আমি তাঁর রাহমাতের জন্য তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট এবং কৃতজ্ঞ ছিলাম’।

গল্পের শেষে ওরা দুজন দীর্ঘশ্বাস ফেলে জানালো, ‘আসলে জীবনের উদ্দেশ্য বুঝতে না পারাটাই আত্নহত্যার কারণ। আমাদের বুঝিয়ে বলার জন্য থ্যাংক ইউ আন্টি!’

[গল্পের অংশটুকু রেহনুমা বিনতে আনিসের লেখা ‘ওপারে’ বই থেকে নেয়া]

Share This Article
Tareq Hussain
Tareq Hussain