আমরা প্রায়ই শুনি হজ্জযাত্রীরা বলেন নবীজির রওজা মুবারাকে যাচ্ছি।
আসলে এই রওজা জিনিসটা কী? রসূল (সঃ) এর কবরই হচ্ছে আমাদের প্রিয় রওজা মোবারক।
রওজা মোবারক অর্থ কী?
রওজা আসলে আরবি روضة থেকে এসেছে। রওজা মোবারক অর্থ হচ্ছে সবুজ তৃণভূমি বা বাগান।
নবীজির রওজা মোবারক কোথায় অবস্থিত
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন তিনি বলেন: “আমার ঘর ও আমার মিম্বরের মাঝের স্থানটুকু- রাওদাতুন মিন রিয়াদিল জান্নাহ (জান্নাতের এক টুকরা বাগান) এবং আমার হাউজ আমার মিম্বরের উপর রয়েছে।”[সহিহ বুখারী (১১৯৬) ও সহিহ মুসলিম (১৩৯১)]
ইয়াজিদ ইবনে আবু উবাইদ থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: আমি সালামা বিন আকওয়া এর সাথে আসতাম এবং মুসহাফের নিকটবর্তী পিলারের কাছে নামায পড়তাম। অর্থাৎ রিয়াদুল জান্নাতে। আমি বললাম: হে আবু মুসলিম, আপনাকে দেখি এ পিলারের কাছে নামায পড়তে বেশি আগ্রহী? তিনি বলেন: আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে এ পিলারের কাছে নামায পড়তে আগ্রহী দেখেছি।[সহিহ বুখারী (৫০২) ও সহিহ মুসলিম (৫০৯)]
রওজা মোবারক জিয়ারতের ফজিলত
মসজিদে নববীর সবাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ স্থান হলো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর রওজা মোবারক। উম্মুল মুমিনিন আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহু-এর হুজরার (কামরা) মধ্যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পবিত্র রওজা মোবারক অবস্থিত। হজ ও ওমরা পালনকারীদের মদিনা যাওয়ার অন্যতম উদ্দেশ্য হলো–রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের রওজা মোবারক জিয়ারত করা, রওজায় সালাম পেশ করা।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের রওজা মোবারক যিয়ারতের ফজিলত জানতে কিছু হাদিসই যথেষ্ট হবে ইনশা’আল্লাহ।
হাজী বা অন্যান্য লোকের জন্য হাজ্জ কার্য সম্পাদন করার আগে হোক কিংবা পরে হোক নাবী (সা.)-এর মাসজিদ যিয়ারত করা এবং সেখানে সলাত আদায় করা সুন্নাত। তবে এ মসজিদ যিয়ারত করা হাজ্জে কবুল হওয়ার জন্য শর্তও নয়, হাজ্জের কোন রুকুনও নয় এবং ওয়াজিবও নয়। এমন কি মসজিদ নাববীর যিয়ারত হাজ্জের সাথে কোন সম্পর্ক নেই।
রাসূলুল্লাহ নিজেই বলেছেনঃ
مَا مِنْ أَحَدٍ يُسَلِّمُ عَلَيَّ إِلاَّ رَدَّ اللهُ عَلَيَّ رُوحِي حَتَّى أَرُدَّ عَلَيْهِ السَّلاَمَ
অর্থাৎ ‘‘যে কেউই আমাকে সালাম দেয় তখনই আললাহ তা‘আলা আমার রূহকে ফেরত দেন, অতঃপর আমি তার সালামের জবাব দেই।’’ (আবূ দাউদ ২০৪১)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি অত্যন্ত সম্মানপূর্বক রওজা মোবারক যিয়ারত করা অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ কাজ। তবে একে হজ্বের ফরজ হিসেবে গণ্য করা যাবে না। এটা স্বতন্ত্র মুস্তাহাব ইবাদত। এছাড়াও মসজিদে নববীতে সালাত আদায়ের ফজিলতও কিন্তু বহুগুণ!
মসজিদে নববীতে সালাত আদায়ের বিশেষ ফযীলত রয়েছে। হাদীসে আছেঃ
صَلاَةٌ فِي مَسْجِدِي هَذَا أَفْضَلُ مِنْ أَلْفِ صَلاَةٍ فِيمَا سِوَاهُ
অর্থাৎ, আমার এ মসজিদে নববীতে সালাত আদায় অপরাপর মসজিদের এক হাজার সালাতের চেয়েও বেশী সাওয়াব। (ইবনে মাজাহ ১৪০৪)
রওজা মোবারক জিয়ারতের আদব
পবিত্র মসজিদে নববী যিয়ারতের নিয়তে মদ্বীনা মুনাওয়ারা রওনা দেবেন। সেখানে পৌঁছে সালাত আদায়ের পর আপনি নবীজির সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবর যিয়ারত করবেন। কিন্তু আপনার সফরটি কবর যিয়ারতের উদ্দেশ্যে হবে না। কবর যিয়ারতের উদ্দেশ্যে লম্বা ও কষ্টসাধ্য সফর করা শরীয়তে জায়েয নেই। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
لاَ تُشَدُّ الرِّحَالُ إِلاَّ إِلَى ثَلاَثَةِ مَسَاجِدَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ وَمَسْجِدِ الرَّسُولِ -صلى الله عليه وسلم- وَمَسْجِدِ الْأَقْصَى
অর্থাৎ, (ইবাদতের নিয়তে) মসজিদে হারাম, মসজিদে নববী ও মসজিদুল আকসা ব্যতীত কঠিন ও কষ্টসাধ্য সফরে যেও না। (বুখারী ১১৮৯)
মুস্তাহাব হল প্রথমে ডান পা আগে দিয়ে মসজিদে নববীতে প্রবেশ করবেন এবং পড়বেনঃ
أَعُوذُ بِاللَّهِ الْعَظِيمِ وَبِوَجْهِهِ الْكَرِيمِ وَسُلْطَانِهِ الْقَدِيمِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ – بِسْمِ اللهِ وَالصَّلاَةُ وَالسَّلاَمُ عَلٰى رَسُوْلِ اللهِ – اَللَّهُمَّ افْتَحْ لِيْ أَبْوَابَ رَحْمَتِكَ –
মসজিদে প্রবেশের পর দুই রাকআত দুখুলুল মসজিদ অথবা অন্য যে কোন সালাত আপনি আদায় করতে পারেন। অতঃপর আপনার ইচ্ছা মোতাবেক দোয়া মুনাজাত করতে থাকবেন। উত্তম হলো এগুলো রিয়াদুল জান্নাতে বসে করা। আর এ স্থানটি হলো মসজিদটির মিম্বর থেকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কবরের মধ্যবর্তী অংশের জায়গাটুকু।
এ স্থানটি সাদা কার্পেট বিছিয়ে নির্দিষ্ট করা আছে। ভীড়ের কারণে সেখানে জায়গা না পেলে মসজিদের যে কোন স্থানে বসে সালাত আদায় ও দোয়া-দরূদ পড়তে পারেন।
সালাত আদায়ের পর কবর যিয়ারত করতে চাইলে আদব, বিনয়-নম্রতা ও নিচু স্বরে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কবরের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে এভাবে তাঁকে সালাম দিনঃ
السَّلاَمُ عَلَيْكَ أَيُّهَا النَّبِيُّ وَرَحْمَةُ اللهِ وَبَرَكَاتُهُ – اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا صَلَّيْتَ عَلٰى إِبْرَاهِيمَ وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ – اللَّهُمَّ بَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا بَارَكْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ
যিয়ারতের সময় অত্যন্ত সাবধান থাকবেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে কোন সাহায্য চাওয়া যাবে না। রোগমুক্তি বা কোন মকসূদ পূরণের জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বা মৃত কবরবাসীদের কাছে কোন কিছু যাওয়া যায় না। তাহলে শিরক হয়ে যাবে, তাই এই বিষয়ে সাবধানতা অবলম্বন করা জরুরি।
নবীজির রওজা মোবারক এর ছবি
রওজা মোবারক নিয়ে কিছু নাসীহা
যে ব্যক্তি মসজিদে নববী যিয়ারত করবেন তার জন্য রিয়াযুল/রিয়াদুল জান্নাতে দুই রাকাত নামায আদায় করা কিংবা যত রাকাত তিনি পারেন নামায পড়া বিধানসম্মত। যেহেতু এর ফযিলত সাব্যস্ত।
তবে, রিয়াদুল জান্নাতে নামায পড়ার আগ্রহ যেন অন্য মানুষকে কষ্ট দেয়া, দুর্বলকে ধাক্কা দেয়া কিংবা মানুষের ঘাড় টপকে যাওয়ার পর্যায়ে গিয়ে না ঠেকে।
উপরোক্ত অংশটি মাসজিদে নববীর ইমাম ও খতীব শাইখ সালাহ আল-বুদাইর হাফিজাহুল্লাহর নসীহত।