সা’ঈদ পেশায় একজন ফিজিওথেরাপিস্ট। বহুদিন ধরে একজন মা তার ‘প্যারালাইজড’ সন্তানকে নিয়ে তার হাসপাতালে আসেন। সেদিন তিনি বললেন, “ভাই, আজকেই হয়ত আপনার সাথে আমাদের শেষ সাক্ষাত।”
ফিজিওথেরাপি অনেক লম্বা সময়ের চিকিৎসা। সা’ঈদ ভেবেছিল তারা চিকিৎসার মানে অসন্তুষ্ট। কিন্তু পরে জানতে পারল আসলে সেই মহিলার স্বামী চাকরী হারিয়েছেন। তাই তার সন্তানের চিকিৎসা চালাতে পারবেন না। টাকার অভাবে চিকিৎসা বন্ধ হয়ে যাবে।
সা’ঈদের কাছে খুব খারাপ লাগল। সে অনেক চেষ্টা করল বাচ্চাটার চিকিৎসার জন্য টাকার ব্যবস্থা করতে।
পারল না।
মন খারাপ করে বাড়ি ফিরল সা’ঈদ! নিজের সাথে কথা বলল অনেকক্ষণ ধরে। ৩০ বছর ধরে চাকরী করে সে হজ্জের জন্য টাকা জমিয়েছিল। সিদ্ধান্ত নিল ওই টাকা দিয়ে ঐ পরিবারকে সাহায্য করার।
সে তার মুখটা আসমানের দিকে তুলে বললো,
ইয়া আল্লাহ! আপনি তো জানেন, আপনার ঘর এবং আপনার রাসূলের মাসজিদ যিয়ারত করার চেয়ে আকাঙ্খিত বিষয় আমার কাছে আর নেই! আপনি জানেন আমি সারাটি জীবন ধরে এই আকাঙ্খিত জিনিসটির জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছি।
কিন্তু এই মূহর্তে আমি এটার চেয়ে এই অসহায় পরিবারটিকে সাহায্য করা বেশি পছন্দ করছি। আল্লাহ্! আপনি আমাকে আপনার দয়া থেকে বঞ্চিত করবেন না।
পরদিন সে হাসপাতালে গিয়ে তার কাছে যা ছিল সব দিয়ে দিলো ঐ পরিবারের পক্ষ থেকে। এ দিয়ে আরো ছয় মাস চিকিৎসা চালানো যাবে। সা’ঈদ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে বিশেষভাবে অনুরোধ করল যেন এই কথাটি ওই পরিবারকে না জানায়।
হজ্জে যাওয়ার জমাটুকু শেষ করে বাড়ি ফিরলেও মনটা শান্ত।
সে রাতে সা’ঈদ স্বপ্নে দেখলো সে কাবা ঘরের তাওয়াফ করছে। আর মানুষ তাকে সালাম দিচ্ছে আর বলছে, হ্জ্জ মাবরুর, ওহ্ সা’ঈদ! হজ্জ মাবরুর! তুমিতো দুনিয়াতে হজ্জ করার আগে জান্নাতে হজ্জ করে ফেলেছো!
সকাল বেলা হাসপাতালের ম্যানেজার সা’ঈদকে ফোন করলেন হঠাৎ।
আমাদের হাসপাতালের মালিকের সাথে সহযোগী হিসেবে হজ্জে যাওয়ার কথা ছিলা তার ব্যক্তিগত থেরাপিস্টের। কিন্তু সে তার স্ত্রী গর্ভবতী হওয়ার কারণে তার সাথে হজ্জে যেতে পারছে না। তুমি কি বসের সাথে হজ্জে যেতে পারবে?
সা’ঈদ হ্যাঁ সূচক উত্তর দিয়ে দেরী না করে শুকরিয়ার সিজদা দিলো।
হজ্জে সহযোগীতার বিনিময়ে হাসপাতালের মালিক সা’ঈদকে কিছু দিতে চাইলো।
সা’ঈদ মালিককে বলল, আমার কিছু চাই না কিন্তু একটা পরিবার টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছে না। ওদের কী আমাদের হাসপাতালে ফ্রি চিকিৎসার ব্যবস্থা করা যায়?
মালিক সেই প্যারালাইজড ছেলেটির সমস্ত চিকিৎসাভার গ্রহণ করলেন। ওই হাসপাতালে শিশুটার বাবাকে একটা চাকরীও দিলেন।
শুধু তাই না, গরীব-অসহায়দের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে একটি দান বাক্স স্থাপন করতে রাজি হলেন তিনি।
আর হ্যাঁ, সা’ঈদ যে টাকা সেই চিকিৎসার জন্য ঐ পরিবারকে দিয়েছিল সেটির কথা মালিককে ম্যানেজার বলে দেওয়ায় সে টাকাটাও সা’ঈদকে ফেরত দিলেন তিনি।
সুবহানাল্লাহ, এই জন্যই রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
“বান্দা যতক্ষণ তার ভাইয়ের সাহায্য-সহযোগিতায় রত থাকে, আল্লাহ ততক্ষণ তার সাহায্য-সহায়তায় রত থাকেন।”
সুনানে ইবনে মাজাহ [225]
আপনার আবেগঘন হজ্জ উমরাহ যাত্রার সঙ্গী হতে প্রস্তুত বাংলাদেশের অন্যতম হজ উমরাহ ট্রাভেল এজেন্সী – শেফার্ডস। আজই যোগাযোগ করুন।