নিয়্যাত : উমরার জন্য সিদ্ধান্ত যত আগে নেওয়া যায় ততই ভাল। এতে এজেন্সিগুলো আপনার পছন্দ মতো হোটেল নির্ধারণ করতে পারবে। আগে থেকেই যাওয়ার তারিখ নির্ধারণ করে ফেলতে পারলে সময়মত এয়ার টিকেটের ব্যবস্থা করাও সহজ হয়ে যায়। উমরায় যাওয়ার অন্তত ১ মাস আগে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।
এজেন্সি নির্ধারণ : সিদ্ধান্ত গ্রহনের পরের কাজ হল পছন্দমত একটি এজেন্সি নির্ধারণ করা। যাওয়ার তারিখ, কতদিন থাকবেন, কী ধরণের হোটেলে থাকতে চান, কত দূরত্বে থাকতে চান, আরও কোন সুযোগ-সুবিধা নিবেন কিনা (যেমনঃ খাওয়া-দাওয়া, বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্থান পরিদর্শন, লোকাল ট্রান্সপোর্টের ক্ষেত্রে কী ধরণের বাহন ব্যবহার করতে চান ইত্যাদি) তথ্য জানার পর এজেন্সি আপনাকে একটি প্যাকেজ অফার করবে। অফারকৃত প্যাকেজ আপনার পছন্দ হলে আপনি বুকিং মানি প্রদান করবেন।
ভিসা : প্যাকেজ নির্ধারণ করার পর আপনাকে ০৬ মাস মেয়াদ সম্পন্ন পাসপোর্ট জমা দিতে হবে এবং প্যাকেজমূল্য পরিশোধ করতে হবে। আপনি যদি পুরুষ হন, এবং আপনার বয়স যদি ৪০ এর নিচে হয় তাহলে সৌদির বর্তমান নিয়ম অনুযায়ী আপনি একা উমরায় যেতে পারবেন না। সাথে একজন মহিলা মাহরাম লাগবে। ৪০ এর বেশি বয়সের যে কোনো পুরুষ এজেন্সির সহযোগিতায় ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবেন। মহিলাদের ক্ষেত্রে একজন পুরুষ মাহরাম থাকা আবশ্যক। ভিসার জন্য সৌদি এ্যাম্বাসিতে আবেদন করার মোটামুটি ১ সপ্তাহের মধ্যে ভিসা চলে আসে। এবার এজেন্সি আপনার প্যাকেজ অনুযায়ী, এয়ার টিকেট এবং সৌদি-আরবে হোটেল প্রস্তুত করবে।
ভিসার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজ-পত্রাদি জমা দেওয়ার পর আপনার করণীয় হবে উমরাহর জন্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন দোআ মুখস্থ করা। ইহরাম কীভাবে করবেন, কখন করবেন, ইহরাম অবস্থা জায়েজ এবং হারাম কাজ সমূহ, মক্কায় পৌঁছানোর পর করণীয়, উমরাহর যাবতীয় নিয়মকানুন ইত্যাদি সম্পর্কে পড়াশোনা করা। এগুলো করতে গিয়ে মানুষ কিছু বিদআত এবং অতিরঞ্জন করে ফেলেন, সেদিকে সাবধান এবং সতর্ক থাকতে হবে।
উমরাহ শুধু মাত্র একটি ইবাদাত নয়, বরং এটি মক্কা-মদীনার বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্থান পরিদর্শনের বিশেষ সুযোগ। এসব ঐতিহাসিক স্থান সম্পর্কে আগে থেকে একটু পড়াশোনা করে নিলে আপনি যখন ঐসব স্থান পরিদর্শন করবেন তখন অন্তর দিয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সময়টা অনুভব করতে পারবেন। যা আপনার মনের মধ্যে প্রফুল্লতা বয়ে আনবে এবং আপনার উমরাহকে সার্থক এবং পরিপূর্ণ করবে।
এছাড়াও যখন সৌদি ভ্রমন করবেন তখনকার সময়ে সেখানে কি ধরনের আবহাওয়া থাকবে, সে অনুযায়ী পূর্ব-প্রস্তুতিও গ্রহন করতে পারেন। জরুরী ঔষধপত্রও সংগ্রহে রাখা উচিত। কারণ সেখানে সাধারণ চিকিৎসা সস্তা হলেও ঔষধের দাম বাংলাদেশের চেয়ে বেশি। মক্কা-মদীনায় থাকাকালীন সময়ে কিছু অতিরিক্ত খরচ হয়ে যেতে পারে, এজন্য কিছু রিয়াল সংগ্রহ করে রাখাও জরুরী।
ফ্লাইটের দিনে কমপক্ষে ৪ ঘন্টা আগে এয়ারপোর্টে উপস্থিত হতে হবে। এসময় প্রয়োজনীয় সব কাগজ (যেমনঃ পাসপোর্ট, ভিসার কপি, এয়ার টিকেট, এজেন্সির দেওয়া সার্ভিস ভাউচার ইত্যাদি) কয়েকটি কপি করে কয়েক জায়গায় রাখা ভাল। কারণ এক জায়গায় থেকে হারিয়ে গেলে অন্য জায়গারগুলো কাজে লাগানো যাবে। প্রয়োজনে এগুলো ফ্লাইটের আগের দিন ব্যাগে ভরে রাখা যেতে পারে।
বাড়ি থেকে বের হওয়ার আগেই ইহরামের কাপড় পরে এয়ারপোর্টে যাওয়া উচিত। কেননা এয়ারপোর্টে বা বিমানের মধ্যে ইহরামের কাপড় পরার সময় এবং সুযোগ নাও থাকতে পারে। অবশ্য যারা মদীনা হয়ে মক্কায় যাবেন তারা ইহরামের কাপড় মদীনা থেকে বের হওয়ার সময় পরে নিতে পারেন।
এয়ারপোর্টে চেক ইন, বোর্ডিং পাস সংগ্রহ এবং ইমিগ্রেশন শেষ করে বিমানে উঠতে হবে। বাংলাদেশে থেকে যারা জেদ্দা এয়ারপোর্টে যাবেন তাদের মীকাত হলো “ইয়ালামলাম” (ল্যান্ডিং করার ৪০ মিনিট পূর্বে)। আর যারা মদীনা হয়ে মক্কায় যাবেন তাদের মীকাত হলো “যুল হুলাইফা”। এ স্থানসমূহে পৌঁছানোর পূর্বক্ষণেই ইহরামের নিয়্যত করতে হবে। ইহরামের নিয়্যতের নিয়ম হলো মুখে উচ্চারণ করে “লাব্বাইকা উমরাহ” বলা। এরপর তালবিয়্যাহ পড়তে থাকতে হবে। পুরুষরা উচ্চস্বরে এবং মহিলারা নিম্নস্বরে তালবিয়্যাহ পড়বেন।
বিমান থেকে নেমে হোটেলে পৌঁছানের পর সরাসরি উমরাহ শুরু না করে গোসল এবং যথেষ্ট বিশ্রাম নিয়ে উমরাহ শুরু করা উচিত। কেননা আপনার শরীরে ক্লান্তি থাকলে উমরাহতে মনোযোগ আসবে না। সাধারণত ভাল এজেন্সিগুলোর একটি নির্দিষ্ট সার্ভিস টিম থাকে, যারা আপনার জন্য গাড়ির ব্যবস্থা করা, হোটেলে চেক ইন করা ইত্যাদি কাজে সহোযোগিতা করবে।
মনে রাখাবেন মীকাত থেকে ইহরাম করার মাধ্যমে আপনি ইহরামরত আছেন। অর্থাৎ উমরাহ শেষ না করা পর্যন্ত অনেক হালাল কাজই আপনার জন্য হালাল না। তাওয়াফ শুরুর আগ পর্যন্ত মুখে উচ্চারণের মাধ্যমে উচ্চস্বরে তালবিয়াহ পড়বেন। নারীরা আস্তে আস্তে উচ্চারণ করে তালবিয়াহ পড়বেন।
বিশ্রাম শেষে আপনি হোটেল থেকে বেরিয়ে সরাসরি মাসজিদুল হারামে যাবেন। এরপর তাওয়াফ শুরু করবেন। যদি দেখেন কোন সালাতের জামাআত চলছে তাহলে সব আগে জামাআতে শামিল হয়ে সালাত শেষ করবেন। এমনকি যদি তাওয়াফ চলাকালীন সময়ে জামাআত শুরু হয় তাহলে তাওয়াফ বন্ধ করে জামাআতে শামিল হবেন। সালাত শেষে তাওয়াফের বাকি অংশটুকু যে চক্করে সালাতের জন্য থেমেছিলেন সেই স্থান থেকে শুরু করে তাওয়াফ সম্পন্ন করবেন। তাওয়াফ শেষে মাকামে ইবরাহীমকে সামনে রেখে কোন ফাঁকা স্থানে দু’ রাকাআত তাওয়াফের সালাত আদায় করবেন। এরপর জমজমের পানি পান করবেন। যতটুকু সম্ভব পেট ভরে পানি পান করবেন। এরপর সাঈ করবেন। সাঈ সাফা থেকে শুরু করতে হয়। সাফা থেকে মারওয়াই গেলে একবার এবং মারওয়া থেকে আবার সাফাতে ফিরে এলে আরেকবার। এভাবে সাঁতবার করবেন। অর্থাৎ সাফা থেকে সাঈ শুরু করলে মারওয়ায় গিয়ে শেষ হবে। সাঈ শেষ হলে চুল কাটিয়ে হালাল হয়ে যাবেন। পুরুষরা সেলুনে চুল কাটাবেন। নারীরা হোটেলে ফিরে চুলের আগা ছাঁটবেন।
আমরা উপরে খুবই সংক্ষিপ্তভাবে উমরাহর ধারাবাহিক বর্ণনা দিয়েছি। বিস্তারিত বর্ণনার জন্য অবশ্যই আপনাকে উমরাহর উপরে লিখিত ভাল কোন বই পড়ে নিতে হবে। যা আমরা আগের পর্বগুলিতে উল্লেখ করেছি।
আপনি কি হজ অথবা ওমরাহ করার জন্য নির্ভরযোগ্য এজেন্সীর খোজ করছেন? শেফার্ডস আছে আপনার পাশে। আজই যোগাযোগ করুন।